যেভাবে ধাপে ধাপে হস্তচালিত তাঁতের লুঙ্গি তৈরি করা হয়
হস্তচালিত তাঁতের লুঙ্গি তৈরি করার পুরো প্রক্রিয়াকে তিনটি প্রধান ভাগে বিন্যস্ত করতে পারি। যথা:
ক. সুতোর কাজ
খ. কাপড় বয়ন
গ. কাপড় উপস্থাপন
অতীতে বাংলাদেশের তাঁত বয়ন, সেটি লুঙ্গি হোক বা শাড়ী, মসলিন বা যেকোনো কাপর বয়ন ছিল সম্পূর্ণ স্বাধীন, দেশীয় উপকরণে দেশীয় পদ্ধতিতে তৈরি করা হত। কোনো উপকরণই আমদানী করতে হত না। কিন্তু এখন তাঁত বয়ন কাঁচামাল ও সরঞ্জাম আমদানী ও শিল্প উৎপাদক নির্ভর হয়ে গিয়েছে। যার কারণে কাপড়ের মান নিয়ন্ত্রণের উপর তাঁতীদের এখন আর পূর্ণ কর্তৃত্ব নেই। এই বিষয়টা সুতো প্রস্তুত পর্ব সমন্ধে জানলে ভাল ভাবে বুঝতে পারব।
ক. সুতোর কাজ:
এখন তাঁতীরা আর সুতো কাটে না। দেশের অল্প কিছু এলাকায় অবশ্য এখনও স্বল্প পরিমাণে সুতো কাটা হয়, তারপরও প্রায় সমস্ত সুতোই আসে স্পিনিং মিল থেকে। গত শতকের নব্বইর দশক পর্যন্ত সুতো আমদানী নির্ভর ছিল। তখন ভারত, থাইল্যান্ড ও মিশর থেকে সুতো আসত। বিশেষ করে মিশরের সুতো ছিল খুবই উন্নত মানের। এর পর দেশীয় স্পিনিং মিলগুলোকে সুবিধা দিতে বিশেষ কিছু সুতো ছাড়া সকল সুতো আমদানী বন্ধ করা হয়।
সুতো দেশীয় স্পিনিং মিলে তৈরি করা হলেও তুলোর জন্য দেশ সম্পূর্ণ আমদানী নির্ভর। বিদেশী সুতোয় বিদেশী যন্ত্রে তৈরি করা সুতো সেই আমাদনী করা বিদেশী সুতোর মান দিতে পারে নি। এখনও তাঁতীরা সেই সব আমদানী করা সুতোর কথা মনে করে আফসোস করেন। সম্প্রতি দেশী সুতোর মূল্য সংকটে সরাসরি সুতো আমদানী করছে টেক্সটাইল মিলগুলো। মজার ব্যাপার হল আমদানী করা সুতোর মূল্য দেশে উৎপাদিত সুতোর চেয়ে কম পড়ছে।
প্রথমে বিদেশ থেকে তুলো আমদানী করে স্পিনিং মিলগুলো তারপর সুতো তৈরি করে। উল্লেখ্য বাংলাদেশ পৃথিবীর দ্বিতীয় শীর্ষ তুলা আমদানীকারক দেশ। স্পিনিং মিলগুলোর কাছ থেকে স্থানীয় ডিলারগণ সেই সুতো পাইকারি কিনে থাকেন। একটি স্পিনিং মিল নির্দিষ্ট একটি এলাকার জন্য মাত্র একজন ডিলার নিয়োগ করে থাকে। এবার সুতো ডাইয়ের কাজ। সুতোর ব্যাপারিগণ ডিলার কাছ থেকে পাইকারি সুতো কিনে ডাই তথা রং করেন। তারপর সেগুলো সরাসরি তাঁতীদের কাছে খুচড়া বিক্রি করে। ডিলার নিজেও সুতো রং করে খুচরা বিক্রি করে।
সুতো রং করার সকল উপকরণ যেমন রং, কেমিকেল ইত্যাদি প্রায় সম্পূর্ণ আমদানী নির্ভর। সুতো রং করাও একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়া। শুধু সুতো রং করার প্রক্রিয়া নিয়ে আলাদা আর্টিকেল লেখা যাবে। প্রথমে সুতো বড় একটা ড্রামে ভিজিয়ে সিদ্ধ করা হয়, তারপর নদী বা খালে নিয়ে ধোয়া হয়। এরপর সেগুলো রং ও কেমিকেল মিশ্রণে ডুবিয়ে রং করা হয়। রং করার পর শুকানো হয়, তারপর সুতো তাঁতীদের কাছে বিক্রির উপযোগী হয়।
রং ভেদে ভিন্ন ভিন্ন ধরণের কেমিকেল ব্যবহার করা হয়। লুঙ্গির সুতো কৃত্তিম রং দিয়েই করা হয়। দেশে এখন আবার অর্গানিক ডাই বা প্রাকৃতিক উপকরণ দিয়ে রং করা হচ্ছে তবে তা খুবই কম।
সুতোর কাজের পর্যায়গুলো:
তুলো আমদানী > সুতো স্পিনিং (মেশিনে সুতো কাটা) > সুতোর ডিলার > সুতো রং করা > খুচড়া বিক্রি
খ. কাপড় বয়ন:
১. নলি ভরা:
তাঁতী বাড়িতে লুঙ্গির কাজ শুরু হয় নারীদের হাতে। প্রথম কাজ নলি ভরার কাজটি নারীরা করেন। বেপারি বাড়ি থেকে আসার পর সুতো দুটো ভাগে ভাগ করা হয়, টানার সুতো ও পোড়েনের সুতো (বাইনের সুতো)। টানার সুতো চরকার সাহায্যে কাটিমে জড়ানো হয়। পোড়েনের সুতো জড়ানো হয় নলিতে। কাটিম আকারে ছোট ও মোটা হয়, আর নলি হয় চিকন ও লম্বা। কাটিম বা নলি যেটাতেই সুতো পেচানো হোক না কেন, কাজটিকে নলি ভরা বলে।
তাঁতীরা পোড়েনের সুতো শুধু সিদ্ধ করেন, আর কোনো প্রক্রিয়া করা হয় না। কিন্তু টানার সুতো দীর্ঘ ও কষ্টসাধ্য প্রক্রিয়ার ভেতর দিয়ে যায়। এই প্রক্রিয়াগুলো তাঁতের লুঙ্গিকে অনন্যতা দান করেছে, এবং কাপড়ের মান হয় কারখানায় তৈরি করা লুঙ্গির চেয়ে উন্নত।
২. তানা কারানো:
তানা কারানোর উদ্দেশ্য হল টানার সুতো বিন্যস্ত করা, আর এটাই লুঙ্গির ডিজাইনের প্রথম কাজ। এই কাজটিও নারীরা করেন। টানার দৈর্ঘ্য যতটা হবে সেই পরিমাণ দৈর্ঘে চিকন চিকন লাঠি (শর) পোতা হয় মাটিতে, দুই প্রান্তে থাকে বাশের খুটি। তানা কারানিরা ফ্রেমটি নিয়ে এপাশ ও ওপাশে আসা যাওয়া করে সেই লাঠিগুলোতে সুতো সাজিয়ে দেন। তানা কারানিরা প্রথমে ডিজাইন বুঝে নেন, সেই অনুসারে কাটিমগুলোকে সাজান। ফ্রেম নিয়ে এক বার ঘুরে আসাকে বলা হয় এক “ঘুন্ন্যা“।
৩. বিতালি করা
কারানো তানার সুতোগুলোকে জাঙ্গা নামের বাশের অস্থায়ী খুটিতে টান টান করে রাখা হয়। আঙ্গুল দিয়ে একটা একটা করে সুতো সরিয়ে জটমুক্ত করা হয়। এই কাজে আধা ঘন্টার মত সময় লাগে। এটু মূলত পুরুষরা করেন।
৪. মাজন দেয়া
এর পর তানাকে একই ভাবে টান টান করে রেখে মাজন দেয়া হয়। এটা তাঁত বয়নের সবচে কঠিন পর্যায়। ভোর বেলায় শুরু করা হয় মাজনের কাজ। বেলা বাড়লে রোদ উঠে গেলে মাড় দ্রুত শুকিয়ে যায়, মাড়ে সুতো শক্ত হয়ে মাজনের ব্রাশের ঘষায় ছিড়ে যাবে, এজন্য সকালের আদ্রতা থাকতে থাকতে মাজন দেয়া হয়। এজন্য বিশাল যায়গা লাগে। এমন যায়গায় করা হয় যেখানে আলো থাকে কিন্তু রোদ সরাসরি পড়ে না। যেমন বড় বড় গাছের নিচে।
গ্রামে এই ধরণের যায়গাগুলোকে বাগ বলা হয়। আর যে বাগে মাজন দেয়া, বিতালি করা বা ভিম টানা এসব করা হয় তখন সেযায়গাগুলোকে “তানা খাজ” বলা হয়।
প্রথমে মাড় মিশ্রিত পানি দিয়ে টান টান করা সুতো ভেজানো হয়। যে ব্রাশ দিয়ে ভেজানো হয় সেটিকে বলে বিন্ন্যা। বিন্ন্যা এক ধরণের ঘাস, বিন্ন্যা দিয়ে তৈরি ব্রাশকেও বিন্ন্যা বলা হয়। সুতো ভেজানোর পর মাজন দিয়ে এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে এক টানে ব্রাশ করা হয়। এভাবে বহুবার করা হয়। এটা খুব পরিশ্রমের কাজ। এক একটি মাজের ওজন হয় সাধারণত ১০ কেজি, সর্বনিম্ন ৮ কেজি থেকে সর্বোচ্চ ১২ কেজি পর্যন্ত হতে পারে।
এতে শুধু মাজন দেয়া নয়, আরও বেশ কিছু কাজ করা হয়, প্রতিটি সুতো চেক করা হয়, ছেড়া সুতো জোড়া দেয়া হয়। এই পুরো কাজটি কয়েক ঘন্টা লাগে। একারণে ভোরে শুরু করে রোদ তেতে উঠার আগে শেষ করতে হয়।
মাজন দেয়াই তাঁতের লুঙ্গির মূল “স্ট্রেংথ ফ্যাক্টর”। মাজন দেয়া তাঁতের লুঙ্গির এক অনন্য বৈশিষ্ট্য, মাজন দেয়া হয় না বলেই কারখানায় মেশিনে তৈরি লুঙ্গি সেটি যতি বেশি সানা হোক না কেন, যত ভাল সুতো দিয়ে তৈরি হোক না কেন, সেটি তাঁতের লুঙ্গির সমমানের হতে পারে না। একে তুলান করা যেতে পারে ঘুড়ির সুতোয় মাঞ্জা দেয়ার সাথে। মাজনের ফলে সুতো থেকে আলগা আশ উঠে যায়, সুতো হয় সুক্ষ্ণ, টনটনে, দীর্ঘস্থায়ী, এবং বেশি আরামদায়ক। মাজন দেয়ার কাজ শুধু
৫. হানায় নেয়া
হানা বা সানা হল লোহার ফ্রেম, আদিতে দেশীয় প্রযুক্তিতে বাশ দিয়ে সানা তৈরি করা হত। মাত্র ২৭-৩০ বছর আগেও দোহারে বাশের সানা দেখা গিয়েছে। এখন সানা বিদেশ থেকে আমদানী করায়, লোহা ও স্টিল দিয়ে তৈরি। এই লিংকে সানার সমন্ধে বিস্তারিত বলা হয়েছে।
এই সানার উপরই নির্ভর করে লুঙ্গির প্রস্থ বা উচ্চতার সাইজ, মান একটি সানায় চিরুনির দাতের মত অসংখ্য কাঠি থাকে। হানায় নেয়া হল ওই কাঠিগুলোর প্রায় অদৃশ্য ফাক দিয়ে একটা একটা করে সুতো ঢুকানো। দুটো কাঠির ফাক দিয়ে মাত্র একটি সুতো ঢুকানো হয়। বাদ যায় না একটি ফাকও। এটি দৃষ্টি শক্তির পরীক্ষাও বলা চলে। না দেখলে বোঝানো সম্ভব না কী নিপুন দক্ষতায় চাকুর মত একটা টুল দিয়ে সুতো টেনে ধরে সেই ফাকা দিয়ে ঢুকানো হয়। এই কাজটি নারী-পুরুষ উভয়ই করতে পারেন। তবে পুরুষদের বেশি করতে দেখা যায়।
যে সানায় যত বেশি কাঠি থাকে সে সানায় তত বেশি সুতো লাগে, কাপড়ের ঘনত্ব তত বেশি হয়, তত বেশি টেকসই হয়।
দোহার-নবাবগঞ্জে সাধারণত তিনটি ঘনত্বের সানা ব্যবহার করা হয়, ১৩০, ১৪০, ১৬০ ঘনত্বের সানা। ১৫০ ও ১৭০ এর সানা আছে কোনো কোনো তাঁতীর কাছে, তবে খুবই দূর্লভ। সানার দৈঘ্যের উপরে লুঙ্গির পাশ নির্ভর করে, ৫৪” সানা ও ৫৮” সানা ব্যবহার করা হয়। ১৩০ এর সানাগুলো হয় ৫৪”, এতে লুঙ্গির পাশ হয় ৫০”। যত ইঞ্চি সানা লুঙ্গির পাশ তত হয় না, কিছুটা কম হয়। নিচে ঘনত্ব ও দৈর্ঘ্যের ভিত্তিতে লুঙ্গির সাইজ উপস্থাপন করা হল:
সানার ঘনত্ব | সানার দৈর্ঘ্য | লুঙ্গির প্রস্থ |
১৩০ সানা | ৫৪” | ৫০” |
১৪০ সানা | ৫৪” | ৫১” |
১৪০ সানা | ৫৮” | ৫৫” |
১৬০ সানা | ৫৪” | ৫১” |
১৬০ সানা | ৫৮” | ৫৫”/৫৬” |
৬. ভিম টানা
সুতো নলিতে নেয়া হয়েছে, বিতালি করা হয়েছে, মাজন দেয়া হয়েছে, সানায় ঢুকানো হয়েছে, এবার ভিমে পেচানোর কাজ। তাঁতে দুটো ভিম থাকে, একটা থাকে টানার সুতো, আর বয়ন হয়ে আর একটি ভিমে কাপড় পেচায়। প্রথম ভিমে সুতো পেচানোর কাজটিই হল ভিম টানা। একই সাথে সুতো চেক করা, সুতো টান টান করা হয় এই পর্যায়ে। তানা কারানোর পর থেকেই সুতোর ভেতরে কিছু লাঠি যার নাম শর (হর) ঢুকানো থাকে। দুই প্রান্তের শর থাকে কিছুটা মোটা ও শক্তিশালি। এক প্রান্তের শর মোটা রশি দিয়ে একটা ভাড়ী পাথরে বাঁধা হয়। আর অপর প্রান্তের সুতো ভিমে পেচানো হয়। একটু একটু করে সুতো চেক করা হয়, আর লোহার লেভার দিয়ে ভিম পেচানো হয়। ভিমের টানে সুতোগুলো পাথরকে টেনে নিয়ে আসে। এই টানের ফলে কোনো সুতো দূর্বল থাকলে ছিড়ে যায়, সেগুলো মেরামত করা হয়। এভাবে পুরো সুতো ভিমে পেচানো হয়। এই কাজটি পুরুষরা করেন।
৭. বউ ভরা
বউ হল নাইলনের সুতো। যখন তাঁত বোনা হবে টানার সুতোগুলো দুটো ভাগ হয়ে যায়, তাঁতের কৌশলে অর্ধেক পরিমাণ সুতো উপরে উঠে, আর আর্ধেক নিচে যায়, এই দুইয়ের ভেতর দিয়ে মাকু চলাচল করে কাপড় বয়ন হয়। সুতোগুলো টেনে উপরের দিকে নিয়ে যায় নাইলনের সুতো। এজন্য নাইলন বা বউ সুতোয় ভরা হয়। এটিও একটু দক্ষতা নির্ভর সুক্ষ্ণ কাজ। এটি করার সময় কর্মীর হাত এতো দ্রুত চলে দৃষ্টি অনুসরণ করতে পারে না। এই কাজটি নারী ও পুরুষ উভয়ই করে থাকেন।
৮. তাঁত বোনা
তাঁত বয়নে এটি চুড়ান্ত ও সবচে পরিচিত কাজ। তাঁতে বসে তাঁতী মাকু চালিয়ে কাপড় বুনছেন এই দৃশ্যের ছবি প্রায় সবাই দেখেছেন। দোহার নবাবগঞ্জে গর্ত তাঁত বা পিটলুমে কাপড় বয়ন করা হয়। প্রাচীন গর্ত তাঁতে মাকু বা শাটল হাত দিয়ে ছোড়া হত। কিন্তু এই তাঁতে মাক্কু (মাকু) রশির টানে তীব্রগতিতে চলাচল করে। কোনো কোনো এলাকায় এই তাঁতকে ঠকঠকি তাঁত বলা হয়।
কাঠ নির্মিত তাঁত বসানো হয় মেঝের উপর, মেঝেতে একটা গর্ত থাকে। সেই গর্ত পা ঝুলিয়ে বসেন তাঁতী, সেই গর্তে একটি প্যাডল থাকে। তাতীর সামনে এটি রশি ধুলানো থাকে, যেটিকে বাম দিকে টান দিলে মাকু ডান থেকে বাম দিকে যায়, আর ডান দিকে টান দিলে মাকু ডান দিকে যায়। মাকুতে ঢুকানো হয় সেই নলি, যেগুলো চরকার সাহায্যে সুতো জড়ানো হয়, প্রথমে এর কথা উল্লেখ করেছিলাম। ভিন্ন রঙের নলি মাকুতে ঢুকিয়ে ভিন্ন রঙ দিয়ে চেক ফুটিয়ে তোলা হয়।
৬ পিস লুঙ্গির এক ভিম বয়ন করতে অন্তত দুই দিন লাগে। তাঁত চালানোর কাজ কোনো কোনো নারী পারলেও এটি পুরুষরাই করে থাকেন।
গ. কাপড় উপস্থাপন
তাঁতীর কাছ থেকে লুঙ্গি চুড়ান্ত ক্রেতার সামনে যেভাবে উপস্থাপিত হবে এটি সেই পর্যায়। তিনভাবে লুঙ্গি ক্রেতার কাছে পৌঁছাতে পারে-
১. সরাসরি খুচড়া দোকানে
২. বেপারির মাধ্যমে খুচড়া দোকানে
৩. ব্র্যান্ডের মাধ্যমে খুচড়া দোকানে
খুচড়া দোকানদার তাঁতির কাছ থেকে বা বেপারির কাছ থেকে লুঙ্গি সংগ্রহ করে বিক্রি করেন। যেসব এলাকায় তাঁত নেই সেসব এলাকায় আসলে এভাবে লুঙ্গি সরাসরি খুচড়া বিক্রেতার কাছে পৌঁছে না। এই লুঙ্গিগুলো কোনো রকম প্রসেস করা থাকে না। তাঁত থেকে যেভাবে বের হয় সে অবস্থায় বিক্রি করা হয়, এমনকি ভাঁজ করা হয় না। একসাথে যে ৬টি লুঙ্গি তৈরি হয় সেটাকে এক ভিম লুঙ্গি বলে। বিক্রেতার ছয় পিস লুঙ্গি থেকে কেটে ক্রেতার হাতে তুলে দেন।
কোনো রকম মাড় বা মার্সাইজ করা হয় না। এই লুঙ্গিগুলো দেখে সহজেই বোঝা যায় এগুলো তাঁতে তৈরি কিনা, কিরকম সুতোয় তৈরি করা হয়েছে। ইদানিং কেও কেও অবশ্য ভাজ করে বিক্রি করেন তবে সেটি খুব কম।
বেপারিরা তাঁতির কাছ থেকে লুঙ্গি নিয়ে প্রথমে মাড় দেন। কোনো কোনো বেপারি নিজেও লুঙ্গি তৈরি করেন। মাড় দেবার পর শুকিয়ে কেটে ভাঁজ করা হয়। লুঙ্গির উপরে বেপারির নিজস্ব নামে লেবেল লাগানো হয়। বেপারিরা বড় বড় হাটে বা নিজস্ব নেটওয়ার্কের মাধ্যমে লুঙ্গিগুলো সারা দেশে পাইকারি সরবরাহ করেন। যেহেতু লুঙ্গিগুলো মাড় দেয়া থাকে এগুলো নরম আরামদায়ক হতে কিছুদিন সময় লাগে। মাড় দেয়া লুঙ্গি শেলাই করা হয় না।
অনেকে মনে করেন তাঁতের লুঙ্গি মানেই মাড় দেয়া লুঙ্গি। আবার অনেকে মনে করেন তাঁতের লুঙ্গি মাড় দেয়া হয় না। দুটোই ভুল ধারণা। লুঙ্গিটি ক্রেতার হাতে কোন মাধ্যমে পৌঁছাচ্ছে তার উপর নির্ভর করে মাড় দেয়া হয়েছে কিনা।
আমরা লুঙ্গি কোনো রকম প্রসেস, মাড় বা মার্সাইজ করি না। শুধু কেটে শেলাই করে প্যাকেটজাত করি।
দেশের বড় বড় কোনো ব্র্যান্ডই নিজে হস্তচালিত তাঁতের লুঙ্গি তৈরি করে না। তারা তাঁতের লুঙ্গি বেপারিদের মাধ্যমে বা সরাসরি তাঁতীদের কাছ থেকে ক্রয় করেন। নিজস্ব কারখানায় এগুলো ধুয়ে, মার্সাইজ করে, শেলাই করে, ভাঁজ করে, প্যাকেজিং করে পাইকারি বিক্রি করেন। লুঙ্গিগুলো চলে যায় সারা দেশে খুচড়া বিক্রেতাদের হাতে।
Related Posts
ভালো লুঙ্গি চেনার উপায়
ভালো লুঙ্গি চেনার উপায় জানার আগে বুঝতে হবে ভাল লুঙ্গি বলতে আপনি কী বুঝেন। কেও…
Read Moreপাওয়ারলুমের লুঙ্গিম্যান প্রিমিয়াম লুঙ্গির স্টক
পাওয়ারলুমের প্রিমিয়াম লুঙ্গি (মেশিনে বোনা লুঙ্গি) আমরা কখনও পাওয়ারলুমের লুঙ্গি বিক্রি করব ভাবি নি। কিন্তু…
Read Moreআমাদের লুঙ্গির বর্তমান স্টক
লুঙ্গি বাঙালির পোশাকের কতটা জুড়ে আছে বা তার পরিচয় বলার প্রয়োজন থাকে না। একটা সময় পর্যন্ত…
Read Moreঢাকার ঐতিহ্যবাহী বয়নশিল্পের অবহেলিত উত্তারাধিকারী
ঢাকার ঐতিহ্যবাহী বয়নশিল্প বলতে মিরপুরের বেনারসী শাড়ী টিকে আছে শুধু, আর কাছাকাছি আছে শীতলক্ষার জামদানী।…
Read Moreতাঁতের প্রকারভেদ: বাংলাদেশে যত ধরণের তাঁত আছে
বয়ন শিল্প ও তাঁতযন্ত্রের ইতিহাস অতি প্রাচীন। শিল্পের প্রথম যুগ থেকে তাঁত যন্ত্র যুগে যুগে…
Read Moreতাঁতের লুঙ্গি কাকে বলে?
দোকানে লুঙ্গি কিনতে গিয়েছেন, গিয়ে চাইলেন তাঁতের লুঙ্গি, বিক্রেতা দিলেনও "তাঁতের লুঙ্গি"। লুঙ্গির গায়ে লেবেলেও…
Read Moreঅনলাইনে কিনুন আদি হাতে বোনা তাঁতের লুঙ্গি
অনলাইনে কিনুন তাঁতের লুঙ্গি, নিশ্চতভাবে ঐতিহ্যবাহী আদি হাতে বোনা তাঁতের লুঙ্গি পাবার উপায় 'নূর-আবেদিন লুঙ্গি'।…
Read Moreএখনও কেন হস্তচালিত তাঁতে লুঙ্গি তৈরি করা হয়?
প্রশ্ন এসেছে এখনও কেন হস্তচালিত তাঁতে লুঙ্গি তৈরি করা হয়? যেহেতু আধুনিক প্রযুক্তি চলে এসেছে!…
Read Moreলুঙ্গি বয়নে সানার গুরুত্ব ও কাজ কী?
যে কোনো সুতি কাপড় তৈরি হয় টানা ও পোড়েন দুই দিকের সুতো একে অপারের ভেতর…
Read Moreনূর-আবেদিন লুঙ্গির পরিচয়: অদি-অকৃত্তিম হাতে বোনা
লুঙ্গি বাঙালির পোশাকের কতটা জুড়ে আছে বা তার পরিচয় বলার প্রয়োজন থাকে না। একটা সময়…
Read More